সমগ্র মহাস্থানগড় (পুণ্ড্রনগর) একটি সুবিশাল উন্মুক্ত জাদুঘরের মতো। বিশাল এলাকা জুড়ে ইতিহাসের শত শত উপকরণ ও নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আপনি মহাস্থানগড়ে যেকোন পথ ধরে হাঁটবেন, হাজারো বছরের ইতিহাসের খেরোখাতা আপনার সামনে কতশত নিদর্শন মেলে ধরবে, কেবল সেগুলোকে চিনে নিতে হবে। দুচোখ ভরে দেখতে হবে, মাঝে মাঝে ভগ্ন নগরীর কোথাও নিভৃতে বসবেন। দেখবেন নীরব ইতিহাস মূর্ত হয়ে উঠবে, ভাঙা ইট পাথরও ফিসফিস করে কথা বলবে।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
Disclaimer:
Don't Download & Copy Anything From This Channel. Its a Cyber Crime. All Videos of this Channel is Copyrighted by Md. Shahriar
__________________________________________________
For Invitation & sponsorship contact
01724311030 (what's app/IMO)
[email protected]
Get connected with me
Facebook
/ shahriar.sajon.9
Instagram
/ sajonshahriar
FB page
/ shahriartraveler
Travel Group
/ 190986061246044
✅ Make Sure you subscribe to my channel & press the bell icon to get the notifications of my New videos
___________________________________________________________
মহাস্থানগড়ে অবস্থিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থান খোদার পাথর ভিটা। মহাস্থানগড়ের ভিতরে শাহ সুলতান বলখী (রঃ) মাজারের উত্তরপশ্চিম দিকে সামান্য হাঁটলে পেয়ে যাবেন এ প্রত্নস্থানটি।
মূলত এটি একটি বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। তবে মজার বিষয় হল প্রত্নস্থানটির "খোদার পাথর ভিটা" নামকরণটি হয়েছে এখানে অবস্থিত একটি লম্বা পাথরখন্ডকে কেন্দ্র করে। সে বিষয়ে পরে আসছি।
খোদার পাথর ভিটায় সর্বপ্রথম উৎখনন করা হয় ১৯০৭ সালে। শ্রীযুক্ত জ্ঞানেন্দ্রনাথ গুপ্ত যখন বগুড়ার ম্যাজিস্ট্রেট, তখন সেখানকার একজন প্রকৌশলী এখানে খননকাজ করেন। এর ফলে ১.৫২ মিটার গভীরতায় ৭.৩১ x ৪.৫৬ মিটার পরিমাপের একটি পূর্বমুখী ইমারতের ধ্বংসাবশেষ অনাবৃত হয়েছিল। মন্দিরটি অষ্টম শতকে (পাল আমলে) নির্মিত বৌদ্ধ মন্দির।
ইমারতটির মেঝে পাথরের পট্ট বিছানো এবং ভিত্তির ৯১.৪ সে.মি. উচ্চতা পর্যন্ত দেয়ালও পাথরের তৈরী ছিল। দেয়ালের বাকী অক্ষত অংশটিতে ইট ও কাদার গাঁথুনি দেখতে পাওয়া যায়।
প্রাচীন মন্দিরটি কালের গর্ভে ঠাঁই নিয়েছে, খোদার পাথরটি সবেধন নীলমনির মতো একটু আধটু ভক্তি শ্রদ্ধা আদায় করছে। হিন্দু ও আশেপাশের মুসলিম সম্প্রদায় বিভিন্ন সময় মানত করে পাথরটিতে দুধ ও তেলসিদুঁর দেয়। অনেকে আবার বাড়ির গরু প্রথম দুধ দিলে পাথরে ঢেলে দেয় নৈবেদ্য হিসেবে। অনেকে রোগমুক্তি কামনা করে এখানে। হিন্দু ভক্তরা অনেকে পাথরটিকে ব্রহ্মার বাহন বলে অনেক সময়। কেন এমনটি বলে তা জানা যায় না।
এ বিষয়ে আমার মতামত খুবই সামান্য। পুণ্ড্রের অনেক বৌদ্ধ মন্দির পরবর্তীতে হিন্দুদের মন্দিরে পরিণত হয় এবং বিশেষ করে শিব মন্দিরে পরিণত হয়েছে। এ মন্দিরের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া সম্ভব। বিস্মৃত কালের শিব মন্দিরের শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার প্রথা অলক্ষিতে আজও টিকে আছে। শিবলিঙ্গ নেই, মন্দিরের চৌকাঠের পাথর সে স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে। সেখানেই ইষ্টদেবতা দুধ নৈবেদ্য নেন, ভক্তরা সেসব কথা ভুলেছে – কেবল দুধ দেয়ার কথা মনে রেখেছে। আমার এ মতামতের আরেকটি কারণ, এ প্রত্নস্থলের অদূরেই শাহ সুলতান বলখী (রঃ) মাজারে গৌরীপট্ট এবং মানকালীর কুণ্ডে শিবলিঙ্গ পাওয়ার কথা জানা যায়। এছাড়া পুণ্ড্রে শিবলিঙ্গ অন্যান্য জায়গায়ও পাওয়া গিয়েছে। সুতরাং পুণ্ড্রে শিবমন্দির বিরল নয়।
এতো গেলে হিন্দু সম্প্রদায়ের কথা। আশেপাশের মুসলিম সম্প্রদায়ের দুধ ঢালার প্রথাটিও ভাববার বিষয়। এটি একটি অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রথা হলেও এ প্রথার পেছনে একটি সম্ভাব্য কারণ আছে বলে আমি মনে করি।
প্রাচীন পুণ্ড্রে বৌদ্ধদের আধিক্য ছিলো সেটা ইতিহাসে সুবিদিত। এবং বাংলায় সর্বপ্রথম পীরের আগমন ঘটে এ পুণ্ড্রনগরেই – শাহ সুলতান বলখী (রঃ)। গবেষক আবদুস সামাদ তাঁর "বাংলার মুসলমান জনজাতি" বইয়ে এমনটাই জানিয়েছেন। ইসলামের আগমনে পুণ্ড্রের অধিকাংশ বৌদ্ধ ইসলাম গ্রহন করে এবং বাকীরা হিন্দুদের সাথে মিশে অন্যত্র চলে যায়, বিশেষকরে রাঢ় অঞ্চলে, যেখানে এখনো পুণ্ড্র জাতির বাস রয়েছে। ধর্ম পরিবর্তন হলেও বৌদ্ধ প্রভাব অজান্তেই রয়ে গেছে অনেকের মধ্যে, যার বহিঃপ্রকাশ বৌদ্ধ মন্দিরের চৌকাঠে দুধ নিবেদন। রক্ত কথা বলে। পুণ্ড্রের অধিবাসী অনেকে নিজের অজান্তেই লুপ্ত প্রথা ধরে রেখেছে, যদিও সংখ্যায় এরা খুব কম।
যাই হোক, স্তুপটির উপরে একটি প্রাচীন বটগাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কত কাল এসে চলে গিয়েছে, বটগাছ সেসবের নীরব সাক্ষ্য। গাছের তলায় মাঝে মাঝে বাউল সন্ন্যাসীর আড্ডা বসে, একতারা বাজিয়ে গান গায়। এক তপ্ত দুপুরে আমিও এক গৈরিক বসনধারী বাউলকে দেখেছিলাম, নিজের মনে চমৎকার গান করছে, আরেকজন মনমাতানো বাঁশিতে সুর তুলেছে "খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়"।
গানে লালন সাঁইয়ের প্রশ্নটির মতো ইতিহাসেরও অনেক প্রশ্ন আছে যার উত্তরটি হারিয়ে গেছে। ইতিহাসে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় না, এতেই ইতিহাসের সৌন্দর্য বাড়ে। খোদার পাথর ভিটার মন্দিরটি কে গড়লো, কোন দেবতার, কবে এটা পরিত্যক্ত হলো, পাথরে দুধ কেন ঢালে মানুষ, অন্য নৈবেদ্য কেন দেয় না এমন বহু প্রশ্ন অনেকের মনে রয়ে যাবে। উত্তর দেবে না কেউ, সাক্ষী বটগাছ তো কথা বলছে না। প্রশ্নগুলো তোলা থাক, তবেই তো আগ্রহ নিয়ে, তৃষিত মন নিয়ে দেখতে যেতে ইচ্ছে করবে খোদার পাথর ভিটা – প্রাচীন পুণ্ড্রনগর – আপনার আমার পূর্বজদের নগর।
#মহাস্থানগড় #দুধপাথর #খোদারভিটাপাথর #বগুড়ারদর্শনীয়স্থান #travelvideo #touristspotbangladesh #bdvlogs #budgettour #boguravlog #boguranews