YouTube magic that brings views, likes and suibscribers
Get Free YouTube Subscribers, Views and Likes

বিচারিক আদালতে দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায় উচ্চ আদালতে টিকছে না কেন আইন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

Follow
আইনী পাঠশালা

#মৃত্যুদণ্ড কি এত সহজ?

যে আদালতে কোন মামলার প্রথমে বিচার হয়, সে আদালতকে বিচারিক আদালত বলে। বিচারিক আদালতের রায় সাধারণত চূড়ান্ত রায় নয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষেত্র বিশেষে ডেথ কনফার্মেশন, আপিল, রিভিশন এবং রিভিউয়ের মত কিছু উচ্চতর পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে। বিচারিক আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলে উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে যাওয়া যায়। তারপর হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে অ্যাপিলেট ডিভিশনে যাওয়া যায়। এই দুইটি ডিভিশনে হরহামেশা বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি খালাস পান বা সাঁজা কমে। আবার বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া আসামি দণ্ডিত হন। অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের রায় কখনোই চূড়ান্ত রায় নয়।
I repeat, এসব ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত রায় নয়। এই মামলায় আসামিপক্ষ যদি আপিল নাও করেন, তবুও হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক ডেথ কনফার্মেশন আবশ্যক। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন মামলার যাবতীয় নথি এবং সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে কোন আবেদন ছাড়াই এই রায় পরিবর্তন করতে পারবে। তাছাড়া আপিল, রিভিশন, রিভিউয়ের মত দীর্ঘমেয়াদি উচ্চতর বিষদ পর্যালোচনা সাপেক্ষ প্রক্রিয়া তো আছেই। তারপর বুঝা যায় আসলে আসামিদের ভাগ্যে চূড়ান্তভাবে কী আছে।

এবার আরেকটু টুইস্ট বাকি রইল। বিচারিক আদালত, তারপর হাইকোর্ট ডিভিশন, তারপর অ্যাপিলেট ডিভিশনে ১০১৫২০ বছর ঘুরে চূড়ান্ত রায়ে কোন ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলেও এখানে গেম শেষ নয়।
এরপরে মূল কাজ নির্বাহী বিভাগের। অর্থাৎ, মামলার বিচারের পর নির্বাহী বিভাগ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীকে ছেড়ে দিতে পারেন। নির্বাহী বিভাগের এই ক্ষমতা অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে সংবিধান, দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিধৃত হয়েছে। বিস্তারিত বিধানগুলো নিন্মে উল্লেখ করা হল

১) কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে। [সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯]

২) মৃত্যুদন্ড দান করা যেতে পারে এইরূপ প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকার অপরাধকারীর সম্মতি ব্যতিরেকেই উক্ত দণ্ডকে এই বিধি ও আইন বলে ব্যবস্থিত অন্য যেকোন স্বল্প দণ্ডে রূপান্তরিত করতে পারবেন। [দণ্ডবিধির ধারা ৫৪]। অর্থাৎ, আদালত মৃত্যুদণ্ড দেবার পর অপরাধীর আবেদন ছাড়াই সরকার স্বেচ্ছায় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করে যেকোন মেয়াদের কারাদণ্ডে হ্রাস করতে পারবেন।

৩) রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলে সরকার অপরাধীর সম্মতি ব্যতীতই দণ্ডাজ্ঞা হ্রাস করে অনূর্ধ্ব ২০ বৎসর মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে পরিবর্তন করতে পারবেন। [দণ্ডবিধির ধারা ৫৪]।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ হল অপরাধী যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তিনি কারাগারে থাকবেন। সরকার এই শাস্তিকে কমাতে পারবেন। আর যদি কমান, তাহলে অবশ্যই ২০ বছরের বেশি মেয়াদে কারাগারে রাখবেন না। অর্থাৎ, যাবজ্জীন কারাদণ্ডকে কমিয়ে ২১ বছর, ৩০ বছর, ৪০ বছর ইত্যাদি কোন মেয়াদে করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে হ্রাস করলে অবশ্যই অনূর্ধ্ব ২০ বছরের কারাদণ্ড দিতে হবে।

৪) ৫৪ ধারা বা ৫৫ ধারার কোন বিধান দ্বারাই রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন, মৃত্যুদণ্ড মওকুফ বা স্থগিত করা বা দণ্ডাজ্ঞা হাসের অধিকার ক্ষুন্ন হবে না। [ একই আইনের ধারা ৫৫ক]

৫) কোন ব্যক্তি কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যে কোন সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যা মেনে নেয় সেই শর্তে তার দণ্ড কার্যকরীকরণ স্থগিত রাখতে বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশ বিশেষ মওকুফ করতে পারবেন। [ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০১(১)]

৬) সরকার দণ্ডিত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়াই নিম্নলিখিত যে কোনটি রদবদল করে ইহার পরে উল্লিখিত যেকোন দণ্ড দিতে পারবেন
মৃত্যুদণ্ড, যাবজীবন কারাদণ্ড, আসামী সে সময়ের জন্য দণ্ডিত হতে পারত তার অনধিক সময়ের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড, অনুরূপ মেয়াদের জন্য বিনাশ্রম কারাদণ্ড, জরিমানা।
এই ধারার কোন কিছুই দণ্ডবিধির ৫৪ অথবা ৫৫ ধারার বিধানাবলীকে প্রভাবিত করবে না। [ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০২]

৭) সরকারকে ৪০১ ও ৪০২ ধারায় যে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে তা মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টও প্রয়োগ করতে পারবেন। [একই আইনের ধারা ৪০২ক]

দণ্ড মওকুফ বা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি বা সরকার যেখান থেকেই আসুক, মূল সিদ্ধান্ত হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮(৩)]

২০১৪ সালের ৬ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ২০১৪ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ২৬ জন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামির সাজা মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। (তথ্যসূত্র https://www.prothomalo.com/bangladesh... )

আবার, ২০১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একদিনেই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ২০ জন ফাঁসির আসামির সাজা মওকুফ করেন। (তথ্যসূত্র https://www.banglanews24.com/cat/news... )

posted by bagatell2i