Free YouTube views likes and subscribers? Easily!
Get Free YouTube Subscribers, Views and Likes

টিউশনি ছেড়ে দেওয়ার গল্প | Inspirational Video | Powerful Motivational Speech | Sushanta Paul

Follow
Sazzad Hossain Sumon

জীবনের প্রথম টিউশনির গল্প

মাস্টারি বড়ই প্যারাদায়ক জিনিস। সারামাস পড়ালাম, আর বেতন দেয়ার সময়ে শুনলাম, "আপনি তো অমুক অমুক দিন আসেননি। (হয়তো ক্যালেন্ডারেও দাগানো!)" “আগামী মাসে একসাথে নিয়ো, এ মাসে একটু সমস্যায় আছি। (বাসায় খরচের ধরণ ‘সমস্যা’র কথা জানায় না।)” "এবারের রেজাল্ট তো গতবারের চাইতে খারাপ হল। (ওরা যে এবার কয়েকটা ফ্যামিলি ট্যুর দিল, সেটা বলবে না।)" "ইদানীং সময় একটু কম দিচ্ছেন, একটু বাড়িয়ে দিলে ভাল হত। (কী পড়াচ্ছি, সে খবর নেই, বেশিক্ষণ বসে বসে গল্প করলেও সমস্যা নেই, কিন্তু বসে থাকতে হবে!)" “এ মাস থেকে ওকে ধর্মটাও যদি একটু দেখিয়ে দিতে...... (আহা! ভাগ্যিস, শারীরিক শিক্ষা সিলেবাসে নেই। নাহলে হয়তো জিমে গিয়ে এটা শিখে স্টুডেন্টকে পড়াতে হতো।)” “গতমাসে বাড়ির কাজে হাত দিয়েছি তো, একটু খরচের মধ্যে আছি। তুমি পড়াতে থাক, দেখি তোমার জন্য কী করা যায়। (আহা! যেন করুণা করছে! বাড়ি ওঠে, আর মানসিকতা ওটার তলায় চাপা পড়ে থাকে। বাড়ি করার টাকা আছে, আর আমার বেতন দেয়ার টাকা নেই।)” ............. এরকম আরও অনেক অনেককিছু।
ডাক্তারি যাঁদের পেশা, তাঁরা জানেন, রোগীর সাথে গল্প করা তাঁর কাজ না। অল্প সময়ে যে কাজ হয়ে যায়, সে কাজের জন্য বাড়তি সময় দেয়ার সময় কোথায়? দরকারই বা কী?
মাস্টারি যারা করে, তারা জানে, স্টুডেন্টের জন্য কতটুকু দরকার। যে মাস্টার বাসায় পড়াতে এসে ২ ঘণ্টার চাইতে বেশি সময় দেয়, বুঝতে হবে, সে মাস্টার নতুন, মানে অভিজ্ঞতা অল্প। দক্ষ এবং অভিজ্ঞ মাস্টার আধা ঘণ্টা গল্প করে যে পড়াটা স্টুডেন্টকে পড়াতে পারেন, সেটা নিতেও ওর অন্তত দুইদিন লাগার কথা!
আমি একটা সময়ে অনেক অনেক মাস্টারি করেছি। অনেক মানে, অনেক!!! দিনে ৪৫টাও টিউশনি থাকত। নিজের কোচিং দেয়ার আগে অন্যের কোচিংয়েও ক্লাস নিতাম। পলস্ কোচিং হোম শুরু করার আগে মোট ১৩টা কোচিংয়ে পড়িয়েছি। জীবনে স্টুডেন্ট পড়াতে গিয়ে ভূতের মতো অকল্পনীয় পরিশ্রম করেছি। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে নোট আর শিট রেডি করেছি।
কেন? টাকার জন্য? সেতো কিছুটা বটেই! প্রেম করতাম না বলে কি টাকা লাগত না নাকি? কিন্তু পুরোপুরি টাকার জন্য না। বাবার টাকাপয়সা ভালই ছিল। কিন্তু বাবার টাকা তো বাবার টাকা, আমার তো না। বাবার টাকায় প্রেম করা যায় না, বাবার টাকায় সিগারেট খাওয়া যায় না, বাবার টাকায় সৌখিনতা করা যায় না, বাবার টাকায় বইকেনা যায় না। প্রেম করার বুদ্ধি আর সাহস ছিল না, কখনওই সিগারেট ফুঁকিনি। সৌখিনতা ছিল সেই লেভেলের, অশারীরিক প্রেমিকা বই না হলে চলত না।
তবুও...... বোঝে না বোঝে না সে বোঝে না। ........ কে সে?......... গার্ডিয়ান। আমার স্টুডেন্টের বাবার বিল্ডিং দোতলা থেকে তিনতলায় ওঠে, আর আমার বেতন পারলে দোতলা থেকে দেড়তলায় নামে। দরিদ্র মাস্টার, পড়াতে এসেছে, পড়াবেই তো! দয়া করে বেতন দিচ্ছি, এই তো বেশি!
ডিয়ার চৌধুরী সাহেব! মাস্টারদেরকে দরিদ্র ভাববেন না, প্লিজ! ওই বয়সের একটা ছেলে এর চাইতে আর বেশি কীই বা কামাই করতে পারত? আমি জানি, আমি কী পরিমাণ পয়সা জমিয়েছি মাস্টারি করে। এ জীবনে কখনওই দরিদ্র ছিলাম না। অবশ্য কিছুদিন স্বেচ্ছাদারিদ্র্যে কাটিয়েছি। সে গল্প আরেকদিন বলব।
তবে এত সহজে টিউশনি সবাই পায় না। টিউশনি শুরু করার সময়ে কত ছাড় দিয়ে টিউশনি করেছি, ভাবতেও হাসি পায়। পরে পরে শুধু ভাল স্টুডেন্টকে বাসায় গিয়ে পড়াতাম। সবসময়ই বুক উঁচিয়ে টিউশনি করেছি।
প্রথম টিউশনি থেকে বেতন পাইনি। ভুল হল, বেতন নিইনি। কেন নেবো? ওরা কম দিতে চেয়েছিল। তাই নিইনি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা আকাশছোঁওয়া আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলে। প্রয়োজনে না খেয়ে মরে যাবে, তবুও মাথা নোয়াবে না, এরকম।
জীবনের প্রথম টিউশনি, প্রচণ্ড আবেগ আর আন্তরিকতা নিয়ে পড়াতে গিয়েছিলাম। চুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ডহওয়া ছাত্রের রেটও বেশি ছিল। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাডমিশন কোচিং ওমেকা'তে পড়ানো শুরু করেছিলাম। ম্যাথস্, ফিজিক্স, ইংলিশ পড়াতাম। খুব পড়াশোনা করে পড়াতে যেতাম, এই আশায়, যদি একটা টিউশনি মিলে যায়! তবে সে বয়সটা ছিল স্টুডেন্টদেরকে ইমপ্রেস করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা করার বয়স। অনার্সে বাবার কাছ থেকে কোনোভাবেই টাকা নেবো না, এটা রীতিমতো সংকল্প করেছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই একটা টিউশনি মিলে গেলোও। আফিয়া নামের একটা মেয়েকে বাসায় গিয়ে পড়াতে হবে। ৩ মাসের কন্ট্রাক্ট। মাসে দেবে ৫ হাজার টাকা করে। টোটাল ১৫ হাজার টাকার কন্ট্রাক্ট।
আমি এইচএসসি পাস করেছিলাম ২০০২ সালে। ও ছিল আমার পরের ব্যাচ। বাসা হালিশহর কেব্লকে। মেয়ে অতি রূপসী। বড় আপুর বাসায় থেকে কোচিং করছে। পড়ানো শুরু করলাম, একেবারে মনপ্রাণ দিয়ে। একে তো সুন্দরী, তার উপরে ব্রিলিয়ান্ট; ইমপ্রেস করারও একটা ব্যাপার ছিল। এসএসসি পাস করেছে ডাঃ খাস্তগীর স্কুল থেকে, এইচএসসি ইস্পাহানি কলেজ থেকে। প্রতিদিন ৩৪ ঘণ্টা করে পড়াতাম। সে কী যে কষ্ট করেছিলাম। বুয়েটে আর বিআইটি'তে যা যা প্রশ্ন এসেছে, সেগুলিসহ ফিজিক্সকেমিস্ট্রিম্যাথসের অন্তত ৪৫টা করে বই সলভ করাতাম। ফিজিক্সের প্রামাণিক, ম্যাথসের লুৎফুজ্জামান, কেমিস্ট্রির কুণ্ডু’র বইও সলভ করিয়েছি। আর ইংরেজি পড়াতাম সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব স্টাইলে। আমি জীবনেও কখনও কাউকে গ্রামার শিখিয়ে ইংরেজি শেখাইনি, ইংরেজি শিখিয়ে গ্রামার শিখিয়েছি। কীভাবে, সেকথা আরেকদিন।
এভাবেই চলছিলো। সেইরকম খাওয়াদাওয়া হত ওদের বাসায়। আপু পেপার থেকে বিভিন্ন রান্নার রেসিপি দেখে দেখে রান্না করে খাওয়াতেন আর পেপারের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, "সুশান্ত, দেখো তো ওদের মতো হয়েছে না?" আমি উনাকে উৎসাহিত করার জন্য বলতাম, "আপু, ওদেরটার চাইতেও ভাল হয়েছে।" মেয়েমানুষ মাত্রই রূপের আর রান্নার প্রশংসা শুনতে ভালবাসে; সে যতো কুৎসিতই হোক দেখতে, যতো অখাদ্যই রান্না করুক না কেন!
আহা, যদি জানতাম, যতো নাস্তা, ততো শয়তানি! বুঝিনি কোনোদিনও। প্রথম মাসটা ফুরোলো। বেতন চাইলাম। বলল, পরের মাসে দেবে। আমিও বিশ্বাস করলাম। অনেক অমায়িক ব্যবহার। অমন মুখ মিথ্যে বলতে পারে? অমন চোখে অন্যকিছু লুকানো থাকতে পারে?

posted by maribolherasld