সুচনাঃ
নবাব সিরাজউদ্দৌলা বা মির্জা মুহম্মদ সিরাজউদদৌলা (ফার্সি: ১৭৩২–১৭৫৭) ছিলেন বাংলা বিহারওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব। বাংলা ইতিহাসের এক প্রতিমূর্তি। পলাশীর যুদ্ধে তাঁর পরাজয় ও মৃত্যুর পরই ভারতবর্ষে ১৯০ বছরের ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়।
সিরাজউদ্দৌলা তাঁর নানা নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে ২৩ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাবের ক্ষমতা অর্জন করেন। তাঁর সেনাপতি মীরজাফর, রায়দুর্লভ, বিশ্বাসঘাতকতার কারণে ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন। রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে।
জন্ম ও বংশপরিচয়ঃ
সিরাজউদ্দৌলার জন্ম ১৭৩৩ সালে।[৫] নবাব সিরাজউদদৌলা ছিলেন বাংলার নবাব আলীবর্দী খানএর নাতি। আলীবর্দী খানের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। তার ছিল তিন কন্যা। তিন কন্যাকেই তিনি নিজের বড়ভাই "হাজি আহমদ"এর তিন পুত্র, নোয়াজিশ মোহাম্মদের সাথে বড় মেয়ে ঘসেটি বেগমের, সাইয়েদ আহম্মদের সাথে মেজ মেয়ে শাহ বেগম এবং জয়েনউদ্দিন আহম্মদের সাথে ছোট মেয়ে আমেনা বেগমএর বিয়ে দেন। আমেনা বেগমের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। পুত্ররা হলেন মির্জা মোহাম্মদ (সিরাজউদদৌলা) এবং মির্জা মেহেদী। আলীবর্দী খাঁ যখন পাটনার শাসনভার লাভ করেন, তখন তার তৃতীয়া কন্যা আমেনা বেগমের গর্ভে মির্জা মোহাম্মদ (সিরাজউদদৌলা)এর জন্ম হয়। এ কারণে তিনি সিরাজের জন্মকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে আনন্দের আতিশয্যে নবজাতককে নাতি হিসেবে গ্রহণ করেন। সিরাজ তার নানার কাছে ছিল খুবই আদরের, যেহেতু তার কোনো পুত্র সন্তান ছিলনা। তিনি মাতামহের স্নেহভালোবাসায় বড় হতে থাকেন। সিরাজউদদৌলার জন্মতারিখ বা সাল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে অধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো সিরাজউদদৌলা ১৭৩২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মীরজাফর তার কোন আত্মীয়ের মাঝে পড়েন না। কাজী ইসা তার চাচা হন।
রাজ্যাভিষেকঃ
১৭৪৬ সালে আলিবর্দী খান মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেলে কিশোর সিরাজ তার সাথী হন। আলিবর্দি সিরাজউদদৌলাকে বালক বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তার বয়স অল্প ছিল বলে রাজা জানকীরামকে রাজপ্রতিনিধি নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু বিষয়টি সিরাজদ্দৌলাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই তিনি একদিন গোপনে কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরকে নিয়ে ভ্রমণের নাম করে স্ত্রী লুৎফুন্নেসাকে সঙ্গে নিয়ে মুর্শিদাবাদ থেকে বের হয়ে পড়েন। তিনি সোজা পাটনা গিয়ে উপস্থিত হন এবং জানকীরামকে তার শাসনভার ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেন। কিন্তু নবাবের বিনা অনুমতিতে জানকীরাম তার শাসনভার ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। দুর্গের দ্বার বন্ধ করে বৃদ্ধ নবাবের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দূত পাঠান। অন্যদিকে জানকীরামের আচরণে ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়ে সিরাজদ্দৌলা দুর্গ আক্রমণ করেন। উভয়পক্ষে লড়াই শুরু হয়ে গেলে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে আলিবর্দি খাঁ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সেদিনই আলিবর্দি খাঁ দুর্গের অভ্যন্তরস্থ দরবারে স্নেহভাজন দৌহিত্রকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা দেন, আমার পরে সিরাজউদদৌলাই বাংলাবিহারউড়িষ্যার মসনদে আরোহণ করবে।
ইতিহাসে এই ঘটনাকে সিরাজউদদৌলার যৌবরাজ্যাভিষেক বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই সময়ে সিরাজউদদৌলার বয়স ছিল মাত্র সতেরো বছর। তবে তাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করার ঘটনা তার আত্মীয়বর্গের অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। অনেকেই তার বিরোধিতা শুরু করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আলিবর্দি খাঁর বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম এবং তার স্বামী নোয়াজেশ মোহাম্মদ। এছাড়া আলিবর্দী খানের জীবদ্দশায় সিরাজউদদৌলা ঢাকার নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বন্দিত্ব এবং মৃত্যুঃ
মীরজাফর রাজধানীতে পৌঁছে নবাবকে খুঁজে না পেয়ে চারদিকে লোক পাঠালেন। ১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই সিরাজদ্দৌলা মহানন্দা নদীর স্রোত অতিক্রম করে এলেও তাতে জোয়ার ভাটার ফলে হঠাৎ করে জল কমে যাওয়ায় নাজিমপুরের মোহনায় এসে তার নৌকা চড়ায় আটকে যায়। তিনি নৌকা থেকে নেমে খাবার সংগ্রহের জন্য একটি মসজিদের নিকটবর্তী বাজারে আসেন। সেখানে কিছু লোক তাকে চিনে ফেলে অর্থের লোভে মীর জাফরের সৈন্যবাহিনীকে খবর দেয়।এ সম্পর্কে ভিন্ন আরেকটি মত আছে যে এক ফকির এখানে নবাব কে দেখে চিনে ফেলে। উক্ত ফকির ইতঃপূর্বে নবাব কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে তার এক কান হারিয়েছিল। সেই ফকির নবাবের খবর জানিয়ে দেয়। [৮] তারা এসে সিরাজদ্দৌলাকে বন্দি করে রাজধানী মুর্শিদাবাদে পাঠিয়ে দেয়। বন্দী হবার সময় নবাবের সাথে ছিলেন তার স্ত্রী লুতফা বেগম এবং চার বছর বয়সী কন্যা উম্মে জহুরা। এর পরের দিন ৪ জুলাই (মতান্তরে ৩রা জুলাই) মীরজাফরের আদেশে তার পুত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মুহম্মদিবেগ নামের এক ঘাতক সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করে। কথিত আছে, সিরাজের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ হাতির পিঠে চড়িয়ে সারা শহর ঘোরানো হয়। মুর্শিদাবাদের খোশবাগে নবাব আলিবর্দী খানের কবরের কাছে তাকে কবর দেয়া হয়।
সম্পূর্ণ যাত্রা পালা নবাব সিরাজউদ্দৌলা। Nobab sirajuddaula Full jatra। সিরাজউদদৌলা | Setu Media
=Please: সাবস্ক্রাইব, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন=
একনজরেঃ এই চ্যানেলের কোন ভিডিও অনুমতি ছাড়া অন্য কোন চ্যানেলে আপলোড করা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন ।
#Setu_Media
#Nobab_sirajuddaula_Full_jatra